
বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ
জন্ম : ১ মে, ১৯৪৩ সালামতপুর, ফরিদপুর
মৃত্যু: ৮ এপ্রিল, ১৯৭১ বুড়িঘাট, মহালছড়ি
রাঙামাটি-মহালছড়ি পাহারা দিচ্ছে কয়েকদিন আগে পাকিস্তানি বাহিনী ত্যাগ করে আসা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি। পার্বত্য এলাকায় হানাদার বাহিনীকে রুখতে চিংড়ি খালের বুড়িঘাটে সদ্য স্থাপন করেছে একটি প্রতিরক্ষা বুহ্য।
৮ এপ্রিল ১৯৭১-এর মধ্য দুপুর। সাতটা স্পিড বোট আর দুটো লঞ্চ নিয়ে প্রতিরক্ষা বুহ্যটি আক্রমণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দু কোম্পানি সৈন্য। স্পিড বোটগুলো থেকে তারা চালাতে লাগল মেশিনগানের গুলি আর লঞ্চ দুটি থেকে তিন ইঞ্চি মর্টারের শেল। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত পজিশন নিয়েছিল পরিখায় ও বাংকারে। কিন্তু গোলাগুলির তীব্রতা এত যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে গেল। যোদ্ধারা যে যেভাবে পারল পিছু হটতে লাগল।
কিন্তু পিছু হটতে রাজি হলেন না একজন। তিনি ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ। তিনি দুঃসাহসী, দৃঢ়চিত্ত। ২৮ বছরের এই যোদ্ধা স্বপ্ন দেখেছেন হানাদার মুক্ত বাংলাদেশের। হানাদারদের তিনি পথ ছেড়ে দিতে রাজি নন। নিজের পরিখা থেকে অবিরাম গুলি বর্ষণ শুরু করলেন। এক একটা স্পিড বোটে লক্ষ্য স্থির করেন তারপর গুলি বৃষ্টি। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়তে লাগল শত্রু-সেনা। একে একে শত্রুবাহিনীর স্পিড বোটগুলো ডুবে গেল। পেছনের দুটো লঞ্চ দ্রুত পিছু হটলো। চলে গেল মেশিনগানের আওতার বাইরে।
তারপর হানাদার বাহিনী লঞ্চের উপর থেকে শুরু করল মর্টারের গোলা বর্ষণ। তাদের লক্ষ্য যেভাবেই হোক মুক্তিবাহিনীর মেশিনগানটাকে থামিয়ে দেওয়া। হঠাৎ মর্টারের একটা শেল এসে পড়লো রউফের বাংকারে। মৃত্যু শেলে ঝাঁঝরা হয়ে গেল তার বুক। লুটিয়ে পড়লেন তিনি। নিথর হয়ে পড়ল দেহ। ততক্ষনে সহযোদ্ধা সবাই সরে যেতে পেরেছেন নিরাপদ দুরুত্বে।
তথ্য সূত্র : বীরশ্রেষ্ঠদের কথা – ড. মাহবুবুল হক